নিরাপদ ও উন্নত জীবনের আশায় সিরিয়া থেকে বাবা তার সন্তানকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউরোপের পথে৷ সমুদ্র পেরুতে গিয়ে দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়ে ছয় বছরের শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷ সমুদ্রেই তাকে সমাহিত করতে বাধ্য হন বাবা৷
সাইপ্রাস পুলিশকে এমন নিদারুণ কাহিনি শুনিয়েছেন এক সিরীয়৷ পুলিশের মুখপাত্র ক্রিস্টোস আন্দ্রেউ-এর বরাতে এই সংবাদ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাইপ্রাস নিউজ এজেন্সি৷
সংবাদ মাধ্যমটি সোমবার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, জিজ্ঞাসাবাদে সিরিয়ার এই নাগরিক জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে অভিবাসীদের বহনকারী নৌকাটি সিরিয়া থেকে যাত্রা করে৷ এক পর্যায়ে নৌকার জ্বালানি ফুরিয়ে যায় এবং উত্তাল সমুদ্রে সেটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভাসতে থাকে৷
সাইপ্রাসের নৌ পুলিশের রাডারে ২৯ ফেব্রুয়ারি নৌকাটি ধরা পড়ে৷ এর দুইদিন আগে সিরীয় বাবা সাইপ্রাসের উপকূল থেকে ৬৭ মাইল দূরে (১০৮ কিলোমিটার) একটি কম্বলে জড়িয়ে আদরের সন্তানকে সমুদ্রে সমাহিত করেন৷
পরবর্তীতে টহল জাহাজ অন্তত ৩১ অভিবাসীকে দক্ষিণ উপকূলীয় শহর লারনাকাতে স্থানান্তর করে৷ সাইপ্রাস মাইগ্রেশন সার্ভিসের ডেপুটি অপারেশন চিফ পেট্রস জেনিয়স রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমকে জানিয়েছেন, নৌকার অন্য তিন যাত্রী দূরে শহরের আলো দেখতে পেয়ে সাঁতরে তীরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন৷ ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েও তাদের খোঁজ মেলেনি৷ উদ্ধারকৃতদের দুইজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান জেনিয়স৷ ক্রমাগত সমুদ্রের জল পান করায় তাদের একজনের পরিস্থিতি গুরুতর৷ অন্যজন অবসাদ ও পানিশূন্যতায় ভুগছেন৷ নৌকায় থাকা অন্য ১১ শিশুর সবাই সুস্থ্য আছে বলে জানান তিনি৷
নৌকার ২২ বছর বয়সি চালককে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সাইপ্রাসের আদালত৷ তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অবেহলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে৷
গত বছর ১১৫৮ জন আশ্রয়প্রার্থী নৌকায় চড়ে সাইপ্রাসে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছেন জেনিয়স৷ চলতি বছর ৩১৬ জন অপ্রাপ্তবয়স্ত সমুদ্রপথে দ্বীপটিতে প্রবেশ করেন৷
এদিকে সোমবার ব্রাসেলসে এক সভায় সাইপ্রাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্টান্টিনোস লোয়ানু বলেছেন, সিরিয়ার কিছু অংশে অভিবাসীদের পুনর্বাসন করা যায় কিনা তা ইউরোপীয় ইউনিয়নে পুনঃপরীক্ষা করে দেখা উচিত৷ বিবৃতি অনুযায়ী, গ্রিস, সুইডেন ও অস্ট্রিয়া এতে সায় দিয়েছে৷