আপনার মন্তব্য পাঠাতে ফর্মটি ব্যবহার করুন৷
আপনার বার্তা
বিষয়
আপনার বার্তা
আপনার নাম
নামের শেষাংশ
লিঙ্গ



ইমেল ঠিকানা
শহর
দেশ

ফ্রান্সে অভিবাসনের নতুন অধ্যায়: কঠোর নিয়মের ভারে নতজানু স্বপ্নগুলো

প্রকাশিত - ১৮ এপ্রিল, ২০২৫   ০৪:১৩ পিএম
webnews24
ছবি : সংগ্রহীত
বদরুল বিন আফরোজ, ফ্রান্স

নতুন বছর শুরু হয়েছে প্রায় চার মাস শেষের দিকে, তবে হাজারো অভিবাসীর মনে নেমে এসেছে গভীর অনিশ্চয়তার ছায়া। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া ফ্রান্সের অভিবাসন আইন যেন তাদের জীবনের বাকি আলোটুকুও নিভিয়ে দিচ্ছে। "Retailleau Circular" নামে পরিচিত এই নতুন নির্দেশনা, অভিবাসন প্রক্রিয়াকে করেছে অতীতের চেয়ে অনেক কঠিন ও দুর্ভেদ্য।

শ্রম খাতে নিয়মিতকরণের কঠিন শর্ত: অনেকেই দিনের পর দিন নির্মাণসাইটে কাজ করছেন, কৃষিক্ষেতে ঘাম ঝরাচ্ছেন কিংবা রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে নিরবভাবে স্বপ্ন বুনছেন। কিন্তু নতুন আইনে সেই শ্রমই যথেষ্ট নয়। এখন নিয়মিতকরণের জন্য অভিবাসীদের কমপক্ষে সাত বছর ফ্রান্সে থাকার এবং বিগত তিন বছরে অন্তত ১২ মাস কাজ করার প্রমাণ দিতে হবে। এই কঠোর শর্তে পিছিয়ে পড়ছেন বহু শ্রমজীবী অভিবাসী, যাদের কাজ 'কালো টাকায়' হয়েছে—নথিপত্র নেই, অথচ জীবনভর ফ্রান্সে থেকেছেন।

পরিবারের স্বপ্নে ছেদ: শুধু কর্মজীবনই নয়, পরিবারের আশ্রয়ও এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। যারা শিশুদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, তাদের জন্যও নিয়মিতকরণের জন্য ফ্রান্সে অন্তত ৭ বছর বসবাসের প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক মা বলছিলেন, “আমার ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে, সে ফরাসি ছাড়া কিছুই জানে না। কিন্তু আজ আমাকেই বলা হচ্ছে, আমার ফ্রান্সে থাকার অধিকার নেই।”

ভাষা ও মূল্যবোধের পরীক্ষায় মানবতা কোথায়?: নাগরিকত্ব কিংবা বহুবার্ষিক রেসিডেন্স পারমিট পেতে হলে এখন ফরাসি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে (A2 থেকে B2 স্তর পর্যন্ত)। শুধু তাই নয়, ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে আনুগত্যের প্রমাণও দিতে হবে। এমন শর্ত, যা অনেক অভিবাসীর কাছে নতুন এক মানসিক পরীক্ষার মতো। অনেকেই বলছেন, "ভাষা তো শেখা যায়, কিন্তু ভয়ের মধ্যে শেখা যায় না।"

প্রত্যাখ্যান মানেই দেশত্যাগের আদেশ: নিয়মিতকরণে ব্যর্থ হলে, ফ্রান্সে থাকার সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাখ্যাত হলে সরাসরি “OQTF” – ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, “একটা জীবন গড়েছি এখানে। সব ছেড়ে কোথায় যাব?”

আটকাদেশের সময়ও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি: নতুন আইনে ‘জনসাধারণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচিত অভিবাসীদের প্রশাসনিক আটকাদেশের মেয়াদ ৯০ দিন থেকে বেড়ে ২১০ দিন পর্যন্ত করার প্রস্তাব এসেছে। এই দীর্ঘ বন্দিত্ব যেন মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে – অপরাধ না করেও শুধু ‘অবৈধ’ হয়ে পড়ার জন্য কেউ এতদিন বন্দি থাকতে পারে?

এই নতুন নীতিমালাগুলো প্রমাণ করে, অভিবাসন এখন শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। ফ্রান্সের মাটিতে হাজারো মানুষের চোখে এখন শুধুই ভয়, অনিশ্চয়তা, আর একরাশ জমানো কান্না।
 

প্যারিস প্রবাসী অভিবাসী
ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
কূটনৈতিক সংকেত নাকি জনমত প্রতিফলন?