ফ্রান্স থেকে ফেরিতে ইংল্যান্ডে অভিবাসীদের পাচার করার চেষ্টার দায়ে তিন হাঙ্গেরিয়ান পাচারকারীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ফ্রান্সের দিয়েপ শহরের আদালত। অভিযুক্তরা দুই জন পুরুষ এবং একজন নারী।
ফ্রান্সের নরমান্দি অঞ্চলের দিয়েপ শহরের আদালত সোমবার দেয়া রায়ে এই সাজা ঘোষণা করে। তিন বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও অভিযুক্তদের পরবর্তীতে ফরাসি ভূখণ্ডে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি দিয়েছে আদালত।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম পারি-নরমান্দি জানিয়েছে, রায়ে তিন অভিযুক্তকে অনিয়মিত অভিবাসীদের ফ্রান্সে প্রবেশ, বসবাস এবং পাচারে সহায়তার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন ৩৭ এবং ৪৯ বছর বয়সি পুরুষ এবং একজন ৩৪ বছর বয়সি নারী। তাদের সবাই ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির নাগরিক।
এই তিনজনকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিয়েপ শহরে অবস্থিত ইংলিশ চ্যানেল সংশ্লিষ্ট একটি টার্মিনাল থেকে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি ১০ জন ভিয়েতনামী অভিবাসীর সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
দিয়েপ পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের মতে, ভিয়েতনামী অভিবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়
ভ্যানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তারা একটি ফেরিতে চ্যানেল পার হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।
ওই সময় ১০ অভিবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
অভিবাসীদের তথ্যের ভিত্তিতে লো আভ অঞ্চলের মোবাইল রিসার্চ ব্রিগেড (বিআরএম) এর কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশের এই প্রচেষ্টার পিছনে চোরাকারবারিদের একটি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পান।
এই অঞ্চলের ফেরিগুলোতে অভিযান বাড়িয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি দিয়েপ থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ফেরির রেফ্রিজারেটেড ট্রাকের ভিতরে সাতজন ভিয়েতনামীকে পাওয়া গিয়েছিল। তাদেরকে ব্রিটিশ বন্দর নিউহ্যাভেন থেকে আটক করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার বলে গত বছর ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাফিয়া চক্রগুলোকে আরও ভালভাবে ট্র্যাক করতে ইউরোপীয় সীমান্ত নজরদারি সংস্থা ফ্রন্টেক্সের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্রিটেন।
ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করেছে, এই চুক্তির উদ্দেশ্য ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করতে দুই পক্ষের মধ্যে আরও ভাল তথ্য আদান-প্রদান করা। এছাড়া নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, “সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং মানব পাচার একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এটির জন্য যৌথ সমাধান এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রয়োজন।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইংলিশ চ্যানেলে ‘নৌকা থামানোর’ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও কার্যত তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেননি৷ ২০২৩ সালে প্রায় ৩০ হাজার অভিবাসী দেশটির উপকূলে পৌঁছান৷
