![]() |
ওয়েব নিউজ |
"সত্য কথার স্বাদ তিতা, তাই হয়তো অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়।"
তবে যাদের মুখোশের আড়ালে সুবিধাবাদ লুকিয়ে থাকে, তাদের গল্পগুলো যতই বলা হোক, তাতে খুব একটা চুলকানি হয় না।
প্যারিসের এক নামকরা প্রেসক্লাবের সভাপতির কথাই বলছি—যিনি একাধারে সাংবাদিক, আবার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় সিদ্ধহস্ত এক ‘পদ-সর্বস্ব’ মানুষ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগেও তাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যেত। তিনি ছিলেন তাদের চেনা মুখ, আড্ডার সঙ্গী। কিন্তু এখন?
এখন সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আজকাল তাকে বিএনপি কিংবা জামায়াতপন্থী মহলের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
কেন এই পরিবর্তন?
এক কথায় উত্তর—সুবিধা। সুবিধার দিকেই ঝুঁকে পড়া যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
তিনি আমার ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধাভাজন এক বড় ভাই। প্যারিসে সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক অবস্থান, আদর্শ বা নৈতিকতা নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক—কারণ নিজের অবস্থান বদলানো তার কাছে যেন জামা পাল্টানোর মতো সহজ।
এই সমাজে এ ধরনের মানুষেরই কদর বেশি। কারণ তারা কখনোই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ায় না, বরং স্রোতের গতি মেপে নিজেদের অবস্থান ঠিক করে নেয়—স্বার্থের নিরিখে।
এই ব্যক্তি একদিন আমাকে গর্ব করে বলেছিলেন—“আমি সভাপতির আসনে বসার পর আমাদের সংগঠন থেকে এক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত লম্পটকে সেক্রেটারির সহায়তায় বহিষ্কার করেছি।”তখন মনে হয়েছিল, অন্তত কেউ একজন তো নৈতিক অবস্থান নিয়েছেন।
সেক্রেটারি সাহেব: এক 'গুটিবাজ' চরিত্রের পর্দার আড়াল!
প্যারিসের একটি প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতির পাশাপাশি আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম হচ্ছে তার সেক্রেটারি। সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে যিনি বেশ পরিচিত—তবে সেই পরিচিতির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক চতুর 'গুটিবাজ' চরিত্র।
‘গুটিবাজ’ বলার পেছনে কারণও আছে। এই মানুষটি যতক্ষণ আপনার সামনে থাকবেন, ততক্ষণ আপনাকে উপস্থাপন করবেন প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে। কিন্তু আপনি সরে যাওয়ার পরই শুরু হয় অন্য রূপ—আপনারই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ফোনে গল্প জমবে, আর বলবেন আপনি নাকি তাকে নিয়ে নানা কটু মন্তব্য করেছেন, আর তিনি নাকি তার প্রতিবাদ করেছেন সাহসের সঙ্গে! অথচ ঘটনা ঘটার পর তার মুখে আপনি কোনো শব্দই শোনেননি। এই দ্বিচারিতা ও কূটচালই তাকে 'গুটিবাজ সাংবাদিক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে—এবং সেটা প্যারিসের সাংবাদিক মহলে কোনো গোপন বিষয় নয়।
কিন্তু মজার বিষয় হলো—যারা তাকে প্রকাশ্যে ‘গুটিবাজ’ বলে সমালোচনা করেন, তারাই আবার বিভিন্ন সংগঠনে তাকে পদবীসহ মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখেন! এ এক অদ্ভুত দ্বৈততা—যার ব্যাখ্যা আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কেন এই ভণ্ডামি চলে? স্বার্থের খাতিরে? না কি শক্তির সাথেই থাকাটা এখানে নিয়ম? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো প্যারিসের রাজনৈতিক-সাংবাদিক অঙ্গনেরই কোথাও লুকিয়ে আছে—যেখানে আদর্শ নয়, সম্পর্ক আর সুবিধাই সবচেয়ে বড় মাপকাঠি।
কিন্তু আজ?
আজ সেই বহিষ্কৃত ব্যক্তি, যার নাম শুনলেই আগে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, তারই হাত ধরে সংগঠনের পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন! যে মানুষকে একসময় ঘৃণা করতেন, আজ তার সঙ্গে এক টেবিলে বসে পরিকল্পনা করছেন ক্ষমতা ধরে রাখার! এটাই কি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি নয়?
এই মানুষটিকে বাইরে থেকে দেখে কেউ বুঝবে না তার অন্তরের রঙ। সাদামাটা চেহারা, বিনয়ী আচরণ—কিন্তু ভেতরে প্রবল কৌশলী এক চরিত্র। তিনি নিজেকে সবসময় এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন কোনো সিদ্ধান্তেই তার ভূমিকা ছিল না। ঘটনার মাঝখানে থেকেও তিনি নিজেকে সবসময় ‘নির্দোষ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান—অনেকটা শেখ হাসিনার মতো অবস্থানে দাঁড়িয়ে।
আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো—মাত্র কয়েক মাস আগেও এই ব্যক্তি দাবি করতেন, প্যারিসের একটি বহুল আলোচিত প্রেসক্লাব আসলে ফ্রান্সভিত্তিক নয়, এটি গ্রীসের সংগঠন। তিনি তখন এই ক্লাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন। কিন্তু আজ, সময়ের পালাবদলে, সেই সংগঠনের সদস্যদের দাওয়াত দিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছেন—ঠিক যেমনভাবে কোনো রাজনৈতিক নেতা তার দলীয় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বিরোধীদের সঙ্গেও আপস করে।
শেষ কথা হলো—রাজনীতির মঞ্চে কিংবা সাংবাদিকতার অঙ্গনে, নীতি নয়, এখন যেন ব্যক্তিগত সুবিধাই বড় মাপকাঠি। আর এই গল্পটা—শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এটা আমাদের পুরো প্রবাসী সমাজের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।